রেলওয়ে টিকেট অনলাইন | বুকিং এবং ক্রয় প্রক্রিয়া
বর্তমান ডিজিটাল যুগে “রেলওয়ে টিকেট অনলাইন” ব্যবস্থা যাত্রাপথকে করে তুলেছে অত্যন্ত সহজ ও সুবিধাজনক। পূর্বের মত কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।
আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থেকেই মাত্র কয়েক মিনিটে টিকেট কেটে ফেলতে পারেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের আধুনিক ই-টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম, “রেলসেবা” অ্যাপ এবং ই-সেবা ওয়েবসাইট, পাশাপাশি বিকাশের মতো জনপ্রিয় মোবাইল ফিনটেক সেবার সংযোগ মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি নিরাপদ ও দ্রুততর হয়েছে।
এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব—কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন, কোন সময়ে অনলাইনে টিকেট বুকিং চালু থাকে।
বিকাশ পেমেন্ট ইন্টিগ্রেশন, Shohoz ও রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বর, এসি-বি এবং এসি-এস শ্রেণির সুবিধাসমূহ, তৎকাল ও হাফ টিকিট নীতিমালা, ই-টিকেটিংয়ের সুবিধা, এবং প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী।
প্রতিটি ধাপ ব্যাখ্যা করা হবে সহজ ভাষায়, যাতে “রেলওয়ে টিকেট অনলাইন” সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনার হাতের মুঠোয় থাকে।" "
বাংলাদেশ রেলওয়ে রেজিস্ট্রেশন SMS
অনলাইনে টিকেট কাটার জন্য প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। SMS পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশনের ধাপগুলো:
![]() |
বাংলাদেশ রেলওয়ে রেজিস্ট্রেশন SMS |
- মেসেজ অপশন ওপেন করুন।
- নতুন মেসেজে লিখুন:
BR <Space> NID <Space> জন্মতারিখ(DDMMYYYY)
- পাঠান 26969 নম্বরে।
- সঠিক তথ্য দিলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিশ্চিতকরণ SMS পাবেন।
- পাসওয়ার্ড সেটআপের জন্য নির্দেশনা মেনে অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভ করুন।
বিকল্প: ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকেও ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সরাসরি রেজিস্ট্রেশন করা যায়।
ট্রেনের টিকেট অনলাইনে কিভাবে কাটতে হয়?
“রেলসেবা” অ্যাপ অথবা ই-সেবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া:
![]() |
ট্রেনের টিকেট অনলাইনে কিভাবে কাটতে হয় |
১. লগইন ও রেজিস্ট্রেশন
- অ্যাপ/ওয়েবসাইটে আপনার রেজিস্টার করা মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
- নতুন হলে SMS বা ইমেইলে পাঠানো ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে একাউন্ট ভেরিফাই করুন।
২. ট্রেন সার্চ
- যাত্রার তারিখ ও স্টেশন সিলেক্ট করুন।
- উপলব্ধ ট্রেনের তালিকা থেকে পছন্দের ট্রেন নির্বাচন করুন।
৩. শ্রেণি ও সিট নির্বাচন
- AC_B, AC_S, শোভন, স্লিপার ইত্যাদি শ্রেণি থেকে সিলেক্ট করুন।
- যদি সিট নির্বাচন অপশন থাকে, ম্যানুয়ালি সিট পছন্দ করতে পারবেন।
৪. যাত্রী তথ্য
- প্যাসেঞ্জারের নাম, বয়স, জেন্ডার এবং NID/পাসপোর্ট নম্বর দিন।
- শিশু হলে হাফ টিকিটের জন্য বয়স উল্লেখ করুন।
৫. পেমেন্ট
- বিকাশ, রকেট, নগদ, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ইত্যাদি মাধ্যম নির্বাচন করুন।
- পেমেন্ট সম্পন্ন হলে SMS ও ইমেইলে ই-টিকিট পাবেন।
টিপস:
- পেমেন্টের সময় ইন্টারনেট সংযোগ দ্রুত ও স্থিতিশীল রাখুন।
- টিকিট নিশ্চিত হলে PDF ডাউনলোড করে ফোনে সংরক্ষণ করুন।
- স্টেশন থেকে QR/বারকোড স্ক্যান করে প্রবেশ করতে পারেন—প্রিন্টের প্রয়োজন পড়ে না।
বিকাশ থেকে কিভাবে ট্রেনের টিকিট কাটবেন?
বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে টিকিট কাটার ধাপগুলো:
![]() |
বিকাশ থেকে কিভাবে ট্রেনের টিকিট কাটবেন |
- রেলওয়ের অ্যাপ/ওয়েবসাইটে লগইন করুন।
- ট্রেন ও সিট নির্বাচন সম্পন্ন করে পেমেন্ট পেজে যান।
- পেমেন্ট মাধ্যম হিসেবে “বিকাশ” সিলেক্ট করুন।
- আপনার বিকাশ নম্বর দিন; ফোনে ৪ ডিজিটের ভেরিফিকেশন কোড আসবে।
- কোড ও বিকাশ পিন দিয়ে পেমেন্ট কনফার্ম করুন।
- কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টিকিট SMS ও ইমেইলে পাঠানো হবে।
বিকাশ ব্যবহার করার সুবিধা:
- মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের মতো সহজ, কোনো অতিরিক্ত চার্জ নেই।
- লেনদেনের রসিদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে SMS ও ইমেইলে আসে।
- যদি কোনো কারণে পেমেন্ট না হয়, বিকাশ অ্যাপ থেকে ট্রানজ্যাকশন স্ট্যাটাস চেক করতে পারেন।
Shohoz রেলওয়ে হেল্পলাইন নম্বর
Shohoz একটি জনপ্রিয় অনলাইন বুকিং প্ল্যাটফর্ম, যা বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদির টিকিট সেবা প্রদান করে। Shohoz এর রেল টিকেট বুকিংয়ের জন্য গ্রাহককে ১৬৩৭৪ নম্বরে কল করতে হবে।
- কল সময়: সকাল ৭:০০ থেকে রাত ১১:৫৯ পর্যন্ত।
- টিকেট বুকিং ছাড়াও বাতিলকরণ, রিফান্ড, যাত্রা তথ্য জেনে নিতে কল করা যায়।
- প্রয়োজনে SMS এর মাধ্যমে বুকিং কনফার্মেশন পাঠানো হয়।
কেন Shohoz?
- ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস—মোবাইলে ওয়েব ও অ্যাপ উভয়েই সহজ।
- প্রমোশনাল অফার ও ডিসকাউন্ট কুপন।
- লাইভ চ্যাট সাপোর্ট এবং দ্রুত রেসপন্স টাইম।
বাংলাদেশে রেলওয়ে টিকেট অনলাইন বুকিং সময়
বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং সিস্টেম প্রতিদিন সকাল ৮:০০ টা থেকে রাত ১০:০০ টা পর্যন্ত চালু থাকে। এই সময়ের মধ্যে “রেলসেবা” অ্যাপ ও ই-সেবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেকোনো ইন্টারসিটি ট্রেনের টিকেট বুকিং করা যায়।
তবে বিশেষ কিছু ট্রেনে সার্ভিস মেইনটেন্যান্স বা সাইট আপডেটের কারণে সাময়িকভাবে সেবা সাময়িক বন্ধ হতে পারে—যেমন ঈদ বা বড় কোন উৎসবের আগে অতিরিক্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।
টিপস:
- সাইট চালুর পর প্রথম ১৫–২০ মিনিটে লোড বেশি থাকে; যদি পেজ স্লো করে, কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে পুনরায় চেষ্টা করুন।
- সর্বোত্তম পারফরম্যান্সের জন্য ব্রাউজারে ক্যাশ ক্লিয়ার করে নিন বা অ্যাপের আপডেটেড ভার্সন ব্যবহার করুন।
- যদি সার্ভার ডাউন থাকে, বিকল্প “রেলসেবা” মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে দেখুন।
ট্রেনের হেল্পলাইন নাম্বার
বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব কল সেন্টার ১০ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হয়েছে। যেকোনো নম্বর থেকে ১৩১ নম্বরে কল করে নিম্নলিখিত সেবা পাওয়া যাবে:
- ট্রেনের সময়সূচী ও আসন খালি থাকার তথ্য।
- টিকেট বুকিং, বাতিলকরণ ও রিফান্ড নীতি।
- স্টেশনের অবস্থান, প্ল্যাটফর্ম তথ্য ও যাত্রী সেবা।
- লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড, অভিযোগ ও পরামর্শ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকেট অনলাইন এসি বি কি?
বাংলাদেশ রেলওয়ে দুই ধরনের এসি শ্রেণি অফার করে:
AC_B (সি ক্লাস বার্থ)
- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ২-বার্থ এবং ৪-বার্থ স্লিপার বগি।
- বিছানাপত্র, বালিশ ও চাদর সরবরাহ করা হয়।
- সেরা রাতারাতি ট্রেনে পাওয়া যায়; দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রার জন্য আদর্শ।
AC_S (এসি ক্লাস সিট)
- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসন; সাধারণত দিনের যাত্রার জন্য ব্যবহৃত।
- ২-বার্থে ৩ জন বরাদ্দ, ৪-বার্থে ৬ জন বরাদ্দ।
- সব আসন সংরক্ষিত; ছাদে পাখা ও পড়ার বাতি থাকে।
ই-টিকেটিং কী?
ই-টিকেটিং বা ইলেকট্রনিক টিকেটিং বলতে বোঝায় ইন্টারনেট কিংবা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যানবাহনের (ট্রেন, বাস, প্লেন ইত্যাদি) টিকেট ক্রয় ও সংরক্ষণ পদ্ধতি। মূল সুবিধাসমূহ:
- দ্রুততা: কয়েক ক্লিকে টিকেট কেটে ফেলা যায়, কাউন্টারে লাইন লাগে না।
- পেমেন্ট গেটওয়ে: বিকাশ, রকেট, কার্ড, ইত্যাদি মাধ্যমে নিরাপদ লেনদেন।
- পরিবেশবান্ধব: কাগজ কম ব্যবহৃত হয়; QR/বারকোড স্ক্যানেই প্রবেশ।
- স্বয়ংক্রিয় নোটিফিকেশন: SMS ও ইমেইলে যাত্রার তথ্য ও আপডেট।
- ফ্লেক্সিবিলিটি: যেকোনো ডিভাইস—মোবাইল, ট্যাব, ডেস্কটপে ব্যবহারযোগ্য।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বর্তমানে ই-টিকেটিং সেবা দিয়ে থাকে প্রধানত আন্তঃনগর ট্রেনে।
তৎকাল টিকিট কী?
তৎকাল (Tatkal) টিকিট হলো জরুরি বা হঠাৎ যাত্রার জন্য একদিন আগে বুকিং করার বিশেষ স্কিম। প্রধান বৈশিষ্ট্য:
- বুকিং উইন্ডো: যাত্রার এক দিন আগে—এসি সিটের জন্য সকাল ১০:০০, নন-এসি সিটের জন্য সকাল ১১:০০ থেকে শুরু।
- কোটা: প্রতিটি ট্রেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক তৎকাল আসন বরাদ্দ থাকে।
- চার্জ: সাধারণ টিকিটের উপর অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ।
- ক্যান্সেলেশন: সীমিত রিফান্ড পলিসি, পুরো টিকিট বাতিলযোগ্য নয়।
টিপস:
- বুকিং সময় আগেই লগইন ও যাত্রী তথ্য পূরণ করে রাখুন।
- দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করুন; অটোফিল ফিচার ব্যবহার করুন।
- প্রয়োজনে একাধিক ডিভাইসে একযোগে চেষ্টা করুন।
বাংলাদেশে ট্রেনের হাফ টিকিটের বয়স কত?
বাংলাদেশ রেলওয়ে অনুযায়ী শিশুদের জন্য হাফ টিকিট পলিসি:
- যদি শিশুর বয়স ৫ বছর এর কম (৪ বছর ১১ মাস পর্যন্ত), টিকিট ফ্রি।
- ৫ বছর পূর্ণ হলেই হাফ টিকিটের জন্য যোগ্য—পুরো ভাড়ার ৫০% চার্জ।
- হাফ টিকিট নিতে শিশুর জন্মতারিখ প্রমাণ করতে জন্ম সনদ বা NID কার্ডের অনুলিপি দেখাতে হতে পারে।
শেষ কথা
“রেলওয়ে টিকেট অনলাইন” ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে ট্রেন যাত্রা এখন হয়েছে সহজ, দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত। রেজিস্ট্রেশন থেকে বুকিং, পেমেন্ট, এসি-বি/এসি-এস শ্রেণি, তৎকাল ও হাফ টিকিট—প্রতিটি ধাপ আপনাকে পূর্ণ নির্দেশনা দেয়।
Shohoz এবং রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বর আপনাকে যেকোনো সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে। আজই আপনার স্মার্টফোনে “রেলসেবা” অ্যাপ ইনস্টল করে বা ই-সেবা ওয়েবসাইটে লগইন করে নিরাপদ অনলাইন টিকেটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিন।
নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রার জন্য এই গাইডটি আপনার পকেটে রাখুন!
তথ্য আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url